রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২
logo

লিখে আমি মানুষের কি উপকার করতে পারব?

লিখে আমি মানুষের কি উপকার করতে পারব?

ফজলুল হক, ২৩ এপ্রিল, এবিনিউজ :

(এক)

লেখালেখি নিয়ে কোন আলাপ আলোচনায় আমি অংশ নিইনা। আমার সবসময় মনে হয়, আমি লেখক নই।পত্রিকায় লেখা পাঠাই। লেখা ছাপা হয়। যা মানুষের মনে ধরে না, তা লেখা নয়। আমাদের তরুণ লেখকেরা আজকাল বংকিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কথা মনে রাখেন বলে মনে হয়না। আমার লেখা পাঠকের মনে ধরে কি ধরে না– তা আমি বলতে পারবো না। আমি লিখি বলে বংকিম বাবু বা উনার সম সাময়িকদের, উনার পূর্ববর্তীদের, এমনকি বিশ্বের সকল ক্লাসিকাল ঔপন্যাসিকদের বোঝার চেষ্টা করি। আমি সাহিত্যের ছাত্র না। চেষ্টা করে আমি কিছুই করতে পারবো না। কেন লিখি? সে এক অদ্ভুদ ব্যাপার। লিখে আমি মানুষের কি উপকার করতে পারব? যদি মরণ ব্যাধির দাওয়াই বানাতে পারতাম, তাহলে না– একটা কথা ছিল। আমাদের লেখা পড়ে মানুষ বদলে যাবে? ঘুষখোর– ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে দেবে? রাজনীতিবিদ– ক্ষমতার অপব্যবহার করা বন্ধ করে দেবে? পুলিশ– গ্রেপ্তার বাণিজ্য ছেড়ে দেবে? শিক্ষক– ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেছে, এমন সব সংবাদ ফ্রিজে আবদ্ধ হবে? হিতকারী লেখালেখির দিন এখন আছে? আপনি হিত করতে লিখলে পাঠক আনন্দ সংকটে পড়তে পারে। ক্রিস রায়ান আমাদের তরুণ লেখকরা পড়েছেন কিনা জানি না। পড়তেও পারেন। তরুণরা ভাল লেখে। ক্রিস রায়ান একজন ঔপন্যাসিক, গল্প লেখক, শিক্ষক। রুজভেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স অব ফাইন আর্টস ফ্যাকাল্টিতে পড়ান। তার বিষয় ক্রিয়েটিভ রাইটিংস্‌ বা সৃজনশীল লেখালেখি। শুধু রায়ান না, আরো অনেক নামজাদা লেখক আছেন, যারা কোন না কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কোন ওয়ার্কশপে ক্রিয়েটিভ রাইটিংস কোর্স পড়ান বা পরিচালনা করেন। উনাদের মধ্যে নাম বলতে পারি, জর্জ স্যান্ডার্স, হানিফ কোরেইশি, অ্যাডাম মারেক। সৃজনশীল লেখালেখির চর্চা বিষয়ে, লেখক হতে আগ্রহী তরুণ তরুণীদের মনোভাব কি তা তো আমি চট্‌ করে বলতে পারবোনা। আমি তো দেখি অনেকে ভাল লেখক হওয়ার চেষ্টা করে না। যাই লিখুক তা প্রদর্শনের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠে। নিজেদের গ্রুপ তৈরি করে। আযূব খান “ফ্রেন্ডস নট মাস্টার্স” লিখেছিলেন। উনি লেখক হননি। কিন্তু উনার বই কোটি কোটি কপি সার্কুলেট হয়েছে। এরশাদ কবিতা লিখেছেন। এরশাদ কোনদিন নির্মলেন্দু গুণ বা শামসুর রাহমান হবেন না। লতা মুঙ্গেশকর গানের কোন কোর্স করে যাদুকণ্ঠী হননি। নুর জাহান ডিগ্রি নিয়ে সুরের সম্রাজ্ঞী বা রাণী হননি। সুচিত্রা সেন অভিনয়ের কোর্স করেননি। প্রতিভা আল্লাহর দান। লেখার মতো লেখা যদি আমি লিখতে পারি, তাহলে তা প্রচার ও প্রদর্শন করতে হবে কেন? আপনাকে লেখক হতে হলে নানা ধরনের বইপত্র পড়তে হবে। আলাপ আলোচনার সুযোগ করে নিতে হবে। সৃজন ভাবনাকে নেড়েচেড়ে একটা পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে। আমরা হবু লেখকদের তাদের বিচরনের ক্ষেত্র চিনিয়ে দিতে পারি। আপনাকে বুঝতে হবে, আপনার শক্তির যায়গা কোনটা? এটা কি কবিতা? নাট্যকলা? না, অন্য কিছু? আপনার স্বাচ্ছন্দ বিচরণের জায়গাটা আপনাকে খুঁজে বার করতে হবে। লেখালেখি কি শেখানোর জিনিস? এ প্রশ্ন বারবার আমাদের সামনে আসে। আমাদের তরুণ তরুণীদের একটি অংশ লেখক পরিচিতি পেতে উম্মুখ। এমনকি লিখে যারা মোটামুটি একটা অবস্থানে এসেছে, তারা পদক, পুরস্কার পেতে লবিং করেন। প্রতিদিন ফেসবুকে পত্রিকা কাটিং এর ছবি দেন, “আমার লেখা পড়ুন।” ডাস্টবিনে লেখা থাকে “আমাকে ব্যবহার করুন।” আমি চাই না, লেখকের চিন্তা ভাবনা– কল্পনাশক্তি, উদ্দেশ্যপ্রসুত সাহিত্য ভাবনায় আটকা পড়ুক, তা গণ্ডিবদ্ধ হোক। আপনি একথা শুনে অবাক হবেন না যে, আজকাল লেখক হওয়ার জন্য জন হপকিন্স, কলাম্বিয়া, স্টানফোর্ড, কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্রিয়েটিভ রাইটিংস কোর্স করা যায়। আপনিও করতে পারেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ– একটা যুগের কবি হয়েও উনারা সময়কাল অতিক্রম করেছেন। করতে পেরেছেন। এখন আরেকটা যুগ। এযুগের আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। যে কবি বলেছিলেন, “এখন সব কিছু নষ্টদের দখলে-,” হয়তো তিনি তখন ঠিক বলেছিলেন। যে লেখক বলেছেন, “বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ”– হয়ত তিনিও ঠিক বলেছেন। সময়তো বদলায়। আমাদের পহেলা বৈশাখ, আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি নষ্টদের দখলে যাবে না। যেতে দেবোনা। আমাদের ৭ মার্চ, বজ্রকণ্ঠের ঘোষণা– এবারের সংগ্রাম– কোন কিছু নষ্টদের দখলে যেতে পারেনা। নষ্টদের দখলে যাবেনা– রমনা বটমূল, মঙ্গল শোভাযাত্রা, ২৬ শে মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর। দামামা বাজিয়ে, মাথা উঁচু করে, নিয়াজীর নত শিরের উপর পঁয়ষট্টি কেজি ওজনের পা রেখে এসেছে যে স্বাধীনতা, তাকে তো নষ্টদের দখলে যেতে দিতে পারি না? বাংলাদেশ অসম্ভবকে সম্ভব করার দেশ। “সব সম্ভবের দেশ” এই বিদ্রুপ এখন অর্থবহ নয়। বাংলাদেশ পদ্মা সেতু বানায়। মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠায়। বুলেট ট্রেন চালু করে। নদীর নীচে ট্যানেল বানায়। আমাদের কাছে অসম্ভব কি? আমার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নষ্টদের হাতে যাবে– এটা কেন আমি ভাবব? আমার সাহিত্য ভাবনা, সমাজ ভাবনা– না থাকলে আমি কিসের লেখক? লেখক হয়ে লাভ কি? আমি, আমার সময়কে অতিক্রম করতে পারি– আর না পারি, আমি লিখতেই থাকব। সময়ের সাথে সংলাপ করব। সে ক্ষমতা আমি রাখি। আমি “সময়” এর সাথে কথা বলব।

১৮৮৫ সালে বংকিম চন্দ্র তরুণ লেখকদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন “যশের জন্য লিখবেন না।” সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, দৈনিক প্রথম আলো ( ৬ এপ্রিল ২০১৮) সাহিত্য পাতায় এক নিবন্ধে বলেছেন, এবার (২০১৮) ফেব্রুয়ারির বাংলা একাডেমির বই মেলায় যাদের বই ছাপা হলো, তাদের অনেকের মধ্যে যশাকাংখা তীব্র ছিল। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বইয়ের বাজারে একটা শোরগোল তোলা অনেকের উদ্দেশ্য ছিল। বইয়ের সঙ্গে যখন নিজের রঙিন ছবিটিও (বইয়ের প্রচ্ছদ থেকেও কলাম ইঞ্চিতে যা বড়) ছাপিয়ে দেয়া হয়, তখন ধরে নিতে হবে তিনি বই ভিত্তিক ও চেহারা ভিত্তিক স্বীকৃতি ও যশ উভয়টি প্রত্যাশা করেন। ফেইসবুকে বই নিয়ে যে প্রচার চলে, তাতেও যশ প্রত্যাশার আকাংখা প্রবল। বংকিম চন্দ্র বলেছেন, তাহাতে যশও হয়না, লেখাও ভাল হয়না। যদি বুঝতে পারেন যে লিখিয়া দেশের বা মনুষ্য জাতির কিছু মঙ্গল সাধন করিতে পারেন, তবে অবশ্য লিখিবেন।

“আ রেট্রোসপেক্ট”– এজরা পাউন্ডের এ লেখা তাৎপর্যপূর্ণ। এটি “পোয়েট্রি”ম্যাগাজিনে (১৯১৩) ছাপা হয়েছে। (সুত্র– সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামের প্রবন্ধ (৬/৪/১৮)। এজরা পাউন্ড কবিদের বলেন, বিষয়ের সরাসরি উপস্থাপনা করবেন। কবিতার প্রকাশে যে সকল শব্দ কোন ভুমিকা রাখেনা, সেগুলো একেবারেই পরিহার করবেন। সাঙ্গিতিক শব্দবন্ধে কবিতা লিখবেন। আমার মত হল, এখানে দুটি কথা বলার অবকাশ আছে। (এক) কারো নিয়মকানুন মেনে কবিগণ– “কবি” হন না। (দুই) যিনি কবি, ছড়াকার, সাহিত্যিক– তার জন্য প্রয়োজন পাঠকের ভাল লাগা, তাকে সাহিত্যের অতীত বর্তমান জানতে হবে। তাকে পাঠকের ধার ধারতে হবে। মানুষ কি আগে আপনাকে চিনবে, তারপর আপনার লেখা পাঠ করবে? না লেখা পাঠ করে আপনাকে চিনবে? ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে।

(দুই)

উপন্যাসের ইতিহাস ঘাটাঘাঁটি করে দেখতে পারেন। সাহিত্যের ছাত্র ছাড়া– সাধারণ লেখক ঘাটাঘাঁটি করেন বলে মনে হয়না। সাহিত্যের অনেক ধারার সাথে আপনি পরিচিত হতে পারবেন। একটি ধারা পাঠককে মিথ্‌ থেকে সরিয়ে বাস্তবের দিকে আনার চেষ্টা করেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে উল্টোটা হয়েছে। আধুনিক গদ্যধারা সাবলীল হয়নি। কল্পনা, ইতিকথা যায়গা করে নিয়েছে। লেখক হিসেবে আপনি নানা চিত্রকল্প তুলে আনতে পারেন। পীর আউলিয়ার কেরামতি, ভুতের গল্প, পুরান ইতিহাস– এটা– বাস্তব কাঠামোতে ভরে দিতে পারেন। উপন্যাস, ছোট গল্প যাই লিখেন না কেন,সুপার ফ্লুইটি থাকতে পারে। সুপার ন্যাচারাল, সুপার সায়েন্স টেনে আনতে পারেন।

হান্স হার্ডার জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বঙ্গবিদ্যা সম্মেলনে একটি প্রবন্ধ পড়েছিলেন। এই লেখাটি আমি দৈনিক প্রথম আলোর সাহিত্য পাতা– “শিল্প সাহিত্য” পেজে পড়ি। উনি দেখিয়েছেন কি করে সাহিত্যে পরাবাস্তবতা, magic realist fiction- বাস্তবতার সাথে মিশে যায়। আমি অস্তিত্ববাদ বুঝতে জাঁ পল সার্ত্রের ত্রয়ী উপন্যাস পড়েছি, (Road to Freedom), রোড টু ফ্রিডম (Being and nothingness) বিয়িং এন্ড নাথিংনেস, (Iron in the souls) আয়রন ইন্‌ দি সোলস (অনুবাদ : শেকল অন্তরে) পড়েছি। আমি সাহিত্যের ছাত্র না হওয়ায় লেখালেখিতে আমার নিরন্তর চর্চা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি। আমি আশাবাদী– ভবিষ্যতের পাঠক আমাকে বুঝবে। তারা আমার লেখা ইন্টারনেট থেকে নামাবে। আমার বইগুলোও পাঠক পড়েনি। ভবিষ্যতে পড়বে। ২০০৬ সালে লেখা আমার বই “মিরাকল বাংলাদেশ” এর মর্ম এখন মানুষ বুঝছে। আমার সে বই এর মর্ম ছিল, বিজনেস প্রসেস্‌ড আউট সোর্সিং। বিপিও– এখন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রয়াসের অংশ। আউট সোর্সিং এর কথা আমি ১২ বছর আগে থেকে বলে আসছি। আমার কয়েকজন ছাত্র আগ্রহ দেখিয়েছিল।

(তিন)

সালিমের জন্ম ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ রাত ১২ টায়। ঠিক ওই মুহূর্তে ভারতবর্ষ ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পায়। জন্ম নেয়ার পর হাসপাতালেই একজন খ্রীষ্টিয় আয়া তাকে আর একজন সেই মুহূর্তে জন্মানো শিশুর সংগে বদল করে ফেলে। যার ফলে সালিম গরিব হিন্দু ঘরের বাচ্চা না হয়ে বনেদি একটা মুসলিম পরিবারে মানুষ হয়। সালিমের বিশেষ ক্ষমতার মধ্যে একটা হলো তার টেলিপ্যাথিক আকর্ষণ শক্তি। সে চাইলে উপমহাদেশের অন্যান্য সেই মধ্যরাতে জন্মানো লোকদের একত্র সে করতে পারে। টেলিপ্যাথি প্রয়োগ করে সালিম তাদের সাথে “ভিডিও কন্‌ফারেন্স” (?) বা সে রকম কিছু করতে পারত। এটা অলৌকিক শক্তি।

নিশ্চয় আপনারা বুঝতে পারছেন, এটি মিডনাইট চিলড্রেনস (১৯৮০) এর গল্প। কানাডিয়ান সমালোচক ক্লার্ক ব্রেইজ বলেছেন, আ কন্টিনেন্ট ফাইন্ডিংস ইটস ভয়েস। সালমান রুশদি কি গুন্টার গ্রাস এর কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েছেন? না মার্কেস– বরখেস থেকে বড় লেখক হতে প্রচারণা নয়, প্রতিভা লাগে। আমি আমার ভেতরে সালিমের মতো শক্তির ইঙ্গিত পাই। একদিন মানুষ আমাকে খুঁজবে। মাঝে মাঝে আমি মৃত এবং জীবিতের মধ্যকার সীমারেখা গুলিয়ে ফেলি। আমার লেখায় এসব উপাদান এলে– আপনি নাক সিটকাবেন। তাই না?

(চার)

প্রেস ক্লাবে ছড়াকারদের একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিই। দৈনিক বা সাময়িক পত্রিকা এবং তাদের সাহিত্য সম্পাদকের নাম উল্লেখ করে একটা ঘটনার কথা বলি। ধারাবাহিকভাবে আমার একটা উপন্যাস ছাপানোর পর সাহিত্য সম্পাদক আমাকে বলেন, ওটা উপন্যাস হয়নি। বড় গল্প হয়েছে। সাহিত্য সম্পাদক লেখকের গুণ বিচার করার ক্ষমতা রাখেন। আমি কলেজ থেকে কিছুদিনের ছুটি নিয়ে সরকারি কমার্স কলেজের লাইব্রেরীতে উপন্যাসের বিবর্তনের ইতিহাস পাঠে মনোযোগ দিই। তখন আমার চাকরি ও বাসা ওই কলেজে ছিল। পরে সাহিত্য সম্পাদকের সাথে সাহিত্য নিয়ে কথা বলার আগ্রহ নিয়ে সাক্ষাৎ করি। অনুষ্ঠানে আমার বক্তব্য শেষ হলে সাংবাদিক নাজিম উদ্দিন শ্যামল বল্লেন, স্যার, নাম উল্লেখ না করে বলবেন। কথা উনাদের কানে যাবে। চট্টগ্রামে এমন কবি লেখক আছেন লেখালেখির জন্য কষ্ট করেন। আবার অনেকে কষ্ট করতে চান না। শ্যামল ঠিক বলেছে। লেখক– সাহিত্য সম্পাদক সু–সম্পর্ক থাকতে হবে। আমি কথা বলে সম্পর্ক নষ্ট করব কেন? কিন্তু আমাদের সমালোচক দরকার। বাধাদানকারী নয়।

হারবার্ট সরকারের জীবন ও আত্মহত্যা নিয়ে উপন্যাস হয়েছে। নানা অভিজ্ঞতা হারবার্টের। সে মনে করতে শুরু করে যে সে মৃত ব্যক্তির সাথে কথোপকথন করতে পারে। হঠাৎ সে মৃত লোকের সাক্ষাৎ পায়। মরা মানুষের সাথে যোগাযোগও করতে পারে। “মৃতের সহিত কথোপকথন” নামে সে একটা এজেন্সি খুলে বসে। তার প্রচুর টাকা রোজগার হয়। পশ্চিম বাংলার মানুষ ভাবে হারবার্টের মাথায় গন্ডগোল আছে। তারা হারবার্টকে ধরে। বলে, এসব কি করছ? তোমাকে এসব করতে কে বলেছে? পল নি কন? বেডা প–লির পোয়া। এখন তোমাকে আত্মহত্যা করতে হবে। জীবিত আর মৃতের মধ্যে সীমারেখা আছে, এটা কি সবার জন্য বাধ্যতামূলক? নবারুন ভট্টাচার্য্য সফল ভাবে উনার “হারবার্ট” (১৯৯২) উপন্যাসে (যা নবারুনের প্রথম উপন্যাস) জ্যান্ত আর মৃতের মধ্যবর্তী সীমারেখা শিথিল করেছেন। হারবার্টের মা অনেক আগে মারা যান। বাবাও। ওই জনপ্রিয় উপন্যাসের ঘটনার বিভিন্ন সন্ধিক্ষণে মৃতদের কথা পাঠক শুনেছে। বিশ্বাস করুন, আমার সব সময় মনে হয়, আমি মৃতদের সাথে কথা বলতে সক্ষম। বলিও। আমি আমার এক আত্মীয়কে বলি, বিকেলে তোমার বড় ভাইয়ের সাথে হেঁটেছি। উনি আমাকে এই বলপেন দিয়েছেন। আমার আত্মীয় আমার মাথা চেপে ধরে বলে, স্যার জলদি বাসায় যান। আমার বড় ভাই এক সপ্তাহ আগে মরে গেছে। আপনি কোথায় তাকে পেয়েছেন? সে কবরে। (এটা আমার লেখার কনটেন্ট)।

আমি কি বলতে পারব, “হারবার্ট” উপন্যাস– উপন্যাস নয়– ভূতের গল্প?আমি কি বলতে পারব, “কবি ও দণ্ডিত অ–পুরুষ”– উপন্যাস নয়? আমি বলতে না পারলেও কেউ হয়ত বলতে পারবেন। আমি হেলুসিনেশন দেখি। মৃতকে জীবিত ভাবি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মেডিটেশন করি। (আমার এই ধারার লেখা পাঠক পছন্দ করে)। লেখালেখি বিষয়ে কোন আলোচনায় আমি পারত পক্ষে অংশ নিই না। আমার ভাবনা সব সময় সাহিত্য সম্পাদকদের সাথে মিলবে, এমন কোন কথা নাই। তারা সবাই আমাকে পছন্দ করবে, এমন কোন কথা নাই। লিখে আর কি ই বা করব?

লেখক : সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ। অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ

(সংগৃহীত)

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত