
ড. এম শামসুল আলম, ২৫ এপ্রিল, এবিনিউজ : বিইআরসির আইন লঙ্ঘন হলেও জ্বালানি বিভাগ এলপিজির মূল্যহার বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারণ হতে দিচ্ছে না। মজুদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং সংকট মোকাবেলায় গ্যাস অনুসন্ধান গুরুত্ব পাচ্ছে না। শিল্প ও আবাসিক গ্রাহককে চরম গ্যাস সংকটে রাখা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসবণ্টন চরম বৈষম্যের শিকার। পরিবহন খাতে সিএনজি রেশনিং বাড়ছে। গ্যাস চুরি ও ঘুষ-দুর্নীতি বাড়ছে। অভিযোগ উঠেছে, এলপিজি ও এলএনজির বাজার সম্প্রসারণ এবং মুনাফা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জ্বালানি বিভাগ এসব কৌশল গ্রহণ করেছে। এসব চুরি, ঘুষ, দুর্নীতি ও বৈষম্যের কোনো প্রতিকার না করে এলএনজি আসার অজুহাতে আবারো গ্যাসের মূল্যহার গড়ে ৭৫ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। পরিবহনে এলপিজির মূল্যহার ৫০ টাকা করা হয়েছে। এলপিজি যেন সিএনজির বাজার দখলে নিতে পারে, সেজন্য সিএনজির দাম ৪০ থেকে বাড়িয়ে ৪৮ টাকা করা হচ্ছে। মূল্যহার যত বাড়ে, সংকটও বাড়ে; গ্যাস চুরি, ঘুষ-দুর্নীতি ও গ্যাসবণ্টন বৈষম্য তত বাড়ে। এমন মূল্যহার বৃদ্ধি অন্যায় ও নিপীড়নের শামিল। ভোক্তারা এ বৃদ্ধি বাতিল চায়। উন্নয়ন টেকসই হতে হলে অবশ্যই তা পরিবেশবান্ধব ও ভোক্তার স্বার্থসম্মত হতে হয়।
হিসাবে দেখা যায়, পরিবহনের প্রায় ৬০ শতাংশ চলে সিএনজিতে। এ সিএনজির পরিমাণ মোট গ্যাসের ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তা থেকে শিল্প খাতে ব্যবহার হয় প্রায় ১ শতাংশ (চুরি)। ব্যক্তি পরিবহনে ১ শতাংশ। গণপরিবহনে ৩ শতাংশের মতো। পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ এবং সরকারের রাজস্ব হ্রাস রোধে সিএনজি সরবরাহ কমানো ও মূল্য বাড়ানো সঠিক নয়। সরকার গ্যাস খাত থেকে যে রাজস্ব পায়, তার প্রায় ২৫ শতাংশ আসে সিএনজি থেকে। বলা হয়, প্রায় ৩৫ লাখ চুলায় গ্যাস ব্যবহার হয় মোট গ্যাসের ১৬ শতাংশ। প্রতি চুলায় মাসে ৯৩ ইউনিট গ্যাস ব্যবহার হয়। এ হিসাবে গ্যাসের মাসিক বিল ৮০০ টাকা। বাস্তবে প্রতি চুলায় কমবেশি ২০ ইউনিট গ্যাস ব্যবহার হয়। বাদবাকি প্রায় ৭৫ শতাংশ গ্যাস থেকে গ্রাহক বঞ্চিত হন। অর্থাৎ চুরি হয়। আবার এক কারখানার চুরিকৃত গ্যাস অন্য কারখানায় ব্যবহার হয়। কোনো কোনো বাণিজ্যিক ও ক্ষুদ্র শিল্প গ্রাহক মিটারবিহীন আবাসিক চুলার সংযোগ নিয়ে চুলাপ্রতি মাসিক ৮০০ টাকা মূল্যে ইচ্ছামাফিক গ্যাস ব্যবহার করেন। এসব গ্যাস চুরি, গ্যাসে বাতাস মিশ্রণ, মিটার রিডিংয়ে কারচুপি, গ্যাসবণ্টনে বৈষম্য সৃষ্টি এবং সংযোগ ও লাইসেন্স-পারমিটের মাধ্যমে গ্যাস খাত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বছরে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এসব দুর্নীতি গ্যাস খাত প্রশাসনে কাঠামোগতভাবে সম্পৃক্ত। এলপিজি ও এলএনজি ব্যবসায়ীরা বেশি বেশি মুনাফার আশায় এমন ব্যবসায় গুরুত্ব দেন। বাপেক্সের গ্যাস উত্তোলন ব্যয়হার ১ ডলার হওয়ার কথা। অথচ সে ব্যয়হার এখন ৩ ডলার। আইওসির ব্যয়হারের (৩ দশমিক ২৬ ডলার) কাছাকাছি। গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থ বিনিয়োগে দেশীয় কোম্পানি দ্বারা গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি হয়নি। আইওসি দ্বারা পিএসসির আওতায় বেশি বেশি গ্যাস উত্তোলন করা হয়। বাপেক্সের পরিবর্তে বাপেক্সের কন্ট্রাক্টর হিসেবে গ্যাজপ্রম (আইওসি) দ্বারা গ্যাস উত্তোলন করিয়ে উত্তোলন ব্যয়হার বাড়ানো হয়। অর্থাৎ বাপেক্সের গ্যাস উত্তোলন ব্যয়হার বাড়ে। আবার বেশি বেশি এলএনজি আমদানিও হচ্ছে। এলএনজি আমদানি ব্যয়হারের (৮ দশমিক ৫০ ডলার) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইওসির গ্যাসের মূল্যহারও বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে। এখন এ-মূল্যহার ৬ দশমিক ৫০ ডলার। এসব উন্নয়ন কৌশল কোনোভাবেই ভোক্তার স্বার্থসম্মত হতে পারে না। অথচ জ্বালানি খাত উন্নয়ন নীতি ও কৌশল এভাবেই সাজানো হয়েছে। গ্যাস সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির এসব অন্তর্নিহিত তাত্পর্য ভোক্তা ও উদ্যোক্তাকে পারস্পরিক স্বার্থে অনুধাবন করতে হবে এবং এ খাতকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে শতভাগ রেগুলেটরি নিয়ন্ত্রণাধীনে আনার জন্য সামাজিক আন্দোলনে নামতে হবে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সুন্দরবনের আশপাশে এরই মধ্যে ১০টি এলপিজি প্লান্ট গড়ে উঠেছে। তার মধ্যে নয়টি প্লান্টই সুন্দরবন থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে। সুন্দরবনকে পরিবেশগতভাবে ঝুঁকিমুক্ত রাখার স্বার্থে ওই সীমানার মধ্যে শিল্প-কারখানা স্থাপন নিষিদ্ধ। অথচ এসব এলপিজি শিল্প অবকাঠামো উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও অনুমোদনেই হয়েছে, যা আইনের পরিপন্থী। তাই অনুমোদন প্রক্রিয়ায় জড়িত কর্তৃপক্ষীয় ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া জরুরি। কিন্তু তা হবে না। তাদের পদোন্নতি হবে। এসব করার জন্য তারা আরো ক্ষমতাবান হবেন। তারা সুন্দরবনের নিরাপত্তাকে যেমন ঝুঁকিতে ফেলেছেন, তেমনি উদ্যোক্তার বিনিয়োগ নিরাপত্তাকেও অনিশ্চিত করেছেন। এমন উন্নয়ন কীভাবে পরিবেশবান্ধব ও ভোক্তার স্বার্থসম্মত হয়!
সম্প্রতি সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নৌপথে যাতায়াতকালে কয়লাভর্তি জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে। তেল বা কয়লাভর্তি জাহাজডুবির ঘটনা হরহামেশাই ঘটে। সুন্দরবনের নিরাপত্তার প্রশ্নে এ নৌপথ নৌচলাচলের অনুপযোগী। তাই সুন্দরবনের আশপাশে শিল্প-কারখানা নির্মাণ নিষিদ্ধ করে এ নির্মাণ কার্যক্রম যেমন থামানো যাবে না, তেমনি এ নৌপথে নৌচলাচল বৃদ্ধি ও জাহাজডুবির ঘটনাও বন্ধ হবে না। অর্থাৎ সুন্দরবন সুরক্ষায় ঝুঁকি দিনদিন বৃদ্ধি পাবে, যদি না এ নৌপথে নৌচলাচল বন্ধ হয়। নৌচলাচল আইনি নিষেধাজ্ঞা বলে বন্ধ হবে না, যদি মোংলা থেকে বন্দর সরিয়ে না নেয়া হয়। এক হিসাবে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে এ নৌপথে পণ্য আনা-নেয়া হয় প্রায় তিন মিলিয়ন টন। ২০২১ সাল নাগাদ তা হবে ২০ মিলিয়ন টন। এই যদি অবস্থা হয়, সুন্দরবন সুরক্ষায় নিরাপত্তাহীনতা কোন পর্যায়ে এসে দাঁড়াবে! তাই সুন্দরবন রক্ষা ও দেশের উন্নয়ন উভয় স্বার্থেই মোংলা বন্দর সরিয়ে নেয়া জরুরি। পরিবেশবান্ধব হতে হলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অবশ্যই সুন্দরবন সুরক্ষার ব্যাপারে ইতিবাচক হতে হবে। ওই নৌপথ ও মোংলা বন্দরের মাধ্যমে যেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে এবং বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা সুন্দরবন সুরক্ষায় এখন হুমকিস্বরূপ।
৮ জানুয়ারি ২০১৮তে জ্বালানি বিভাগে সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ভোক্তাপর্যায়ে গ্রাহকভিত্তিক এলএনজি মিশ্রিত গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারিত হয়েছে। সেই নির্ধারিত মূল্যহার কোনো গণশুনানি ছাড়াই কার্যকর করার জন্য বিইআরসিতে পাঠানো হয়েছে এবং বিইআরসি এ ব্যাপারে চাপে রয়েছে। এলপিজি, এলএনজি ও এলএনজি মিশ্রিত গ্যাসের মূল্যহার ন্যায্য ও যৌক্তিক হতে হবে। তা কেবল গণশুনানির ভিত্তিতেই সম্ভব। কোনো পণ্য বা সেবা সঠিক দামে, সঠিক মাপে ও সঠিক মানে পাওয়া ভোক্তার মৌলিক অধিকার। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার বৃদ্ধি ব্যবসাবান্ধব হওয়ায় ভোক্তার সে অধিকার সংকটাপন্ন। মূল্যহার যত বাড়ে, সে সংকটও তত বাড়ে।
সার ও বিদ্যুৎ খাতে দেয়া গ্যাসে লোকসান দেখিয়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম গ্রিড বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩ দশমিক ১৬ টাকা থেকে ১০ টাকা (২০৬ শতাংশ), ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৯ দশমিক ৬২ টাকা থেকে ১৬ টাকা (৬৬ শতাংশ) এবং সার উৎপাদনে ২ দশমিক ৭১ টাকা থেকে ১২ দশমিক ৮০ টাকা (৩৭২ শতাংশ) বৃদ্ধি করা হয়েছে। শিল্পে বৃদ্ধি হয় ৭ দশমিক ৭৬ টাকা থেকে ১৫ টাকা (৯৩ শতাংশ)। কোনো যুক্তিতেই গ্যাসের মূল্যহারের এমন বৃদ্ধি ন্যায্য ও যৌক্তিক হতে পারে না। শিল্প, বাণিজ্য, পরিবহন, এমনকি আবাসিকে ব্যবহূত গ্যাস বর্তমানে লোকসানে নেই। বরং লাভে আছে। সেসব লাভ থেকে আসা ক্রস-সাবসিডিতে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনে ব্যবহূত গ্যাসে আর্থিক ক্ষতি সমন্বয় হয়। সে সমন্বয় হয়েও গ্যাস খাত লাভে থাকে। গ্যাস বিক্রির অর্থের প্রায় ৮০ শতাংশ এসডি-ভ্যাট, করপোরেট কর, সম্পদমূল্য, গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অনুদান, সাপোর্ট ফর শর্ট-ফল তহবিলের হিস্যা— এসব নামে সরকার পায়। ক্রস-সাবসিডিতে গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে যে বিবেচনায়, এলএনজি মিশ্রিত গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণে সে বিবেচনা অনুপস্থিত। তাছাড়া এত বেশি মূল্যবৃদ্ধির অভিঘাত অর্থনীতির পক্ষে সহ্য করা সম্ভব কিনা, তাও বিবেচিত হয়নি। এমন এলএনজিবান্ধব উন্নয়নে সর্বস্তরের ভোক্তারাই আতঙ্কিত।
বর্তমানে দিনপ্রতি গ্যাস সরবরাহ হয় ২ হাজার ৬৯০ মিলিয়ন ঘনফুট। মে থেকে গ্রিডে দিনে এলএনজি যোগ হবে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি মিটার এলএনজি মিশ্রিত গ্যাসের বিক্রয় মূল্য গড়ে ১২ টাকা ৯৫ পয়সা। এ মূল্যহার নির্ধারণে প্রতি ঘনমিটার এলএনজির ক্রয়মূল্য (আমদানি ব্যয়) ধরা হয় ২০ টাকা ২২ পয়সা। ভোক্তা পর্যায়ে ভ্যাটসহ এলএনজির বিক্রয় মূল্যহার ২৬ টাকা ৮২ পয়সা। এ মূল্যহারে এসডি, গ্যাস উন্নয়ন তহবিল চার্জ, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল চার্জ ও সাপোর্ট ফর শর্ট-ফল তহবিল চার্জ ধরা হয়নি। অথচ এলপিজির মূল্যহার ৫০ টাকা। সিএনজির মূল্যহার ৪০ টাকা। আবার এ মূল্যহার বাড়িয়ে ৪৮ টাকা করা হচ্ছে। কারণ এতে এলপিজির বাজার সম্প্রসারণ ও মুনাফা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু তাতে পরিবহন ভাড়া বাড়বে এবং সরকার রাজস্ব হারাবে। এ বিষয়টি মোটেও গুরুত্ব পাচ্ছে না। এমন উন্নয়ন টেকসই হওয়া কঠিন।
আইওসি, বাপেক্স, বিজিএফসিএল ও এসজিএফএল এসব দেশীয় কোম্পানির কাছ থেকে ক্রয়কৃত গ্যাসের ক্রয়ের মূল্যহারের সঙ্গে এসডি-ভ্যাটসহ উল্লিখিত সব চার্জ ও মার্জিন যোগ করায় ভোক্তা পর্যায়ে দেশীয় গ্যাসের বিক্রয় মূল্যহার হয় ৭ দশমিক ৩৯ টাকা। এসডিসহ ওইসব চার্জ দ্বারা ঘাটতি সমন্বয়, এলএনজি মিশ্রিত গ্যাসের সরবরাহ ব্যয় যৌক্তিকীকরণ এবং গ্যাস চুরি ও ঘুষ-দুর্নীতি রোধ করা হলে ভোক্তা পর্যায়ে এলএনজি মিশ্রিত গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধির প্রয়োজন হয় না। জ্বালানি খাত উন্নয়ন ব্যবসাবান্ধব না হয়ে যদি ভোক্তাবান্ধব হতো, তাহলে এ প্রেক্ষাপট ভিন্ন হতো। উন্নয়ন ঝুঁকিমুক্ত হতো।
ভোক্তার স্বার্থসম্মত এলপিজি ও এলএনজি মিশ্রিত গ্যাস এবং পরিবেশবান্ধব এলপিজির দাবিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটে ২০ এপ্রিল আয়োজিত নাগরিক সভায় আবারো গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি না করাসহ নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য নাগরিকদের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়:
(ক) সুন্দরবনের আশপাশ থেকে এলপিজিসহ সব শিল্প অবকাঠামো সরিয়ে নিতে হবে, (খ) সুন্দরবনের মধ্যে নৌপথে নৌচলাচল নিষিদ্ধ হতে হবে এবং সুন্দরবন সুরক্ষায় মোংলা বন্দর সরিয়ে নিতে হবে, (গ) পরিবহন ও আবাসিকসহ সব খাতে ব্যবহূত এলপিজির মূল্যহার এলএনজির মূল্যহারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গণশুনানির ভিত্তিতে নির্ধারণ হতে হবে, (ঘ) বিইআরসিতে প্রক্রিয়াধীন এলএনজি মিশ্রিত গ্যাসের মূল্যহার নির্ধারণ গণশুনানির ভিত্তিতে হতে হবে, (ঙ) আইওসির কাছ থেকে ক্রয়কৃত গ্যাস ১৯৯৩ সালের এসআরও ২২৭ মতে এসডি-ভ্যাট মুক্ত। অথচ ভোক্তাদের কাছ থেকে এসডি-ভ্যাট আদায় করা হয়। ওই এসডি-ভ্যাট বাবদ আদায়কৃত অর্থে এলএনজি ক্রয়জনিত আর্থিক ঘাটতি সমন্বয় হতে হবে, (চ) গ্যাসের সম্পদমূল্য বাবদ আদায়কৃত অর্থেও এ ঘাটতি সমন্বয় হতে হবে, (ছ) গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন ফলপ্রসূ হয়নি। যেহেতু বাপেক্সের গ্যাস ক্রয় মূল্যহার বেড়ে আইওসির গ্যাস ক্রয় মূল্যহারের কাছাকাছি পৌঁছেছে, সেহেতু এ তহবিলের অর্থে ঘাটতি সমন্বয় হতে হবে, (জ) এলএনজি থেকে যেহেতু সরকার শুধু ভ্যাট নেয়, সেহেতু দেশীয় গ্যাস থেকে ভ্যাট ব্যতীত আর সব উপায়ে আহরিত অর্থ দ্বারা ঘাটতি সমন্বয় হতে হবে, (ঝ) সেচ, পরিবহন, শিল্প ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহূত তরল জ্বালানির যতটুকু এলএনজি মিশ্রিত গ্যাস দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে, তাতে যে পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে, সে পরিমাণ অর্থে ঘাটতি সমন্বয় হতে হবে, (ঞ) আবাসিক, পরিবহন ও শিল্পে ব্যবহূত গ্যাসের একটি বড় অংশ নানাভাবে চুরি হয়। এ চুরি বন্ধ হলে গ্যাস সরবরাহ ব্যয় কমপক্ষে ২০ শতাংশ কমে। এ পরিমাণ অযৌক্তিক ব্যয় মূল্যহারে নয়, ঘাটতিতে সমন্বয় হতে হবে, (ট) যেহেতু সিএনজি ও আবাসিক গ্রাহকের নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ এবং তারা গ্যাস সংকটে আছে, এলএনজি মিশ্রিত গ্যাসে তাদের গ্যাস সংকট উপশম হবে না, সেহেতু তাদের গ্যাসের অযৌক্তিক মূল্যহার কমিয়ে যৌক্তিক করতে হবে এবং (ঠ) এলএনজি আসার পরও যদি শিল্প গ্রাহকরা গ্যাস সংকটে থাকে, তাহলে সংকটের তারতম্য অনুসারে বাধ্যতামূলক ক্ষতিপূরণ প্রদানের আইনি বিধান থাকতে হবে।
তবে এসব কোনো কিছুতেই কিছু হবে না, যদি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে স্বার্থসংঘাতমুক্ত করা না হয় এবং সে লক্ষ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণমুক্ত করে সম্পূর্ণভাবে একক রেগুলেটরি নিয়ন্ত্রণাধীনে আনা না হয়। তা না হলে নিজের তেল-গ্যাস-কয়লা সম্পদ উত্তোলনে জাতীয় সক্ষমতা অর্জনের পরিবর্তে সে সক্ষমতা বিসর্জন দেয়া হবে। পরিবেশবান্ধব নয়, এমনকি গণবান্ধবও নয়, অসাধু ব্যবসাবান্ধব জ্বালানি উন্নয়ন নীতি ও কৌশল গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। (বণিব বার্তা থেকে সংগৃহীত)
লেখক : জ্বালানি বিশেষজ্ঞ; অধ্যাপক ও ডিন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা