![ট্রেনের টিকেট কেনা...](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/29/mamun_137394.jpg)
ট্রেনের টিকেট কেনা
নূরুল হুদা আল মামুন
"""""""""""""""""""'""""""""'""""
ট্রেনের টিকেট কালো বাজারী হয় প্রায় সব স্টেশনে। কিন্তু জামালপুর যারা ট্রেনে যাতায়াত করেন, তারা নিশ্চয়ই আমার সাথে একমত হবেন যে, জামালপুর স্টেশন কালোবাজারীদের স্বর্গ রাজ্য। আপনি ১০ দিনে আগে অগ্রীম টিকেট কাটতে গেলেও পাবেন কিনা সন্দেহ অাছে বৈ কি! কর্মক্ষেত্রে যাতায়াত করার সুবাদে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। ৭/৮ দিন আগে অগ্রীম টিকেট পাইনি। অগত্যা ব্লাকারদের শরনাপন্ন হলাম। শোভন চেয়ার ১৯০/ টাকার টিকেট দুইদিন ঘুরিয়ে ৫০০/ টাকায় কিনলাম।
.
স্টেশনের দক্ষিণ পাশের বাড়িগুলো যেন এক একটা ট্রেনের টিকেট কাউন্টার। আপনি কোথায় কখন কোন ট্রেনে যাবেন, বলা মাত্র টিকেট পাবেন। অবশ্য টাকার অংকটা বাড়িয়ে দিতে হবে।
ওখানে যারা টিকেট ব্যবসা করেন তাদেরকে মালিক বলা হয়। প্রতি মালিকের রয়েছে ১০/১২ জন করে কর্মী। মালিকরা ৯/১০ দিন আগে স্টেশনের টিকেট মাষ্টারের সাথে যোগসাজসে সব টিকেট কিনে আনেন। আর কর্মীরা স্টেশনের আশে পাশে ঘোরাঘুরি করে। আপনি টিকেট কাটতে গেলে কাউন্টার থেকে যখন ব্যর্থ মনে টিকেট ছাড়া বের হবেন তখন কর্মীরা আপনাকে সরাসরি বলবে কবের টিকেট লাগবে? আপনার চাহিদা মত অগ্রীম টাকা নিয়ে আপনাকে দাড় করিয়ে রেখে মালিকের কাছ থেকে টিকেট এনে দেবে। কপাল মন্দ হলে আপনার টাকা খোঁয়া যাবারও সম্ভাবনা থাকবে। যেমনটা একদিন আমার বেলাও হয়েছে।
.
তেমনি একজন কর্মী পারভেজ, আমাকে দুই দিন ঘুরিয়ে রেফার করে দিয়েছিল তার মালিক আনজু ভাইয়ের কাছে।
বিকল্প টিকেট কাউন্টার আনজুর বাড়ি গিয়ে, আনজু ভাই বাড়ি আছেন বলাতে বেড়িয়ে আসলো তার স্ত্রী। কবের টিকেট লাগবে, জিজ্ঞেস করে মাঝ বয়েসী আনজুর স্ত্রী। আমাকে সসম্মানে বসতেও বলে চেয়ার এগিয়ে দিলেন। পাশে খাটে ভর দুপুরে নাক ডেকে ঘুমুচ্ছেন সকলের আনজু ভাই। কৃষ্ণ বরণ বিশালদেহী মানুষ আনজু ভাই। অনেকটা জলহস্তীর মতো দেখতে। আমি একটু ভড়কে গিয়েছিলাম বটে। পাশে দুটো শিশু তার দেহের উপর লম্ফ জম্ফ দিয়ে যাচ্ছে অনবরত। কিন্তু তাতে কি! তার ঘুমের নুন্যতম বিঘ্ন ঘটার কারণ মনে হলো না।
টিকেট কেনা বলে কথা, আমিও ডেকে চললাম আনজু ভাই----বেশ কয়েকবার। কিন্তু তার হুঁশ আসছে না ।
তার স্ত্রী ডেকে যাচ্ছেন, ওঠো টিকেট নিতে আসছে ইত্যাদি। এক পর্যায় সবার পেয়ারে আনজু ভাইয়ের স্ত্রী রাগত স্বরে বললেন, 'তোমারে দারোগায় ডাকছে। তাও তার হুঁশ ফেরানো গেল না। পরে তার স্ত্রী বললেন,' ওনার শরীরটা বেশি ভালো নাতো'।
আমি বললাম, তাহলে?
তার স্ত্রী বললেন, 'দেখি কি করা যায়, মেয়েকে ডাকলো , ময়না ওনারে ২৬ তারিখের একটা তিস্তার টিকেট দে'। ময়না ঘরের খুঁটির চিপার মধ্য থেকে এক পোটলা টিকেটের খনি আবিষ্কার করলো। বেছে বেছে আমাকে চাহিদা মত টিকেট দিল।
এক টিকেটে দুই সীট। এ আবার আর এক বিড়ম্বনা। এবার ময়না আমাকে বললো 'টিকেটের দাম ৫০০/ টাকা । আর ফটোকপি করে নিতে হবে।' আমি রাজি হলাম না তাতে। বললাম, আসল টিকেট আমার কাছে থাকবে আর তুমি ফটোকপি তুমি রেখে অন্যকে বিক্রি করো। কিন্তু ময়না তাতে রাজি হলো না। এমন সময় আরো কম করে হলেও জনা দশেক খদ্দের (টিকেট ক্রেতা)হাজির হলো।
.
অনেকটা ব্যর্থ হয়ে যখন বের হচ্ছি তখন আমাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এলো অন্য এক মালিকের অন্য এক কর্মী শামীম। সে আমাকে সিঙেল টিকেট দেওয়ার আশ্বাস দিল। এবার স্টেশনের কাছে মসজিদের সামনে আমাকে দাড় করিয়ে মালিকের বাড়ি থেকে সিঙেল টিকেট এনে দিলেন শামীম। টিকেটের গায়ে ১৯০ টাকা লেখা থাকলেও আমাকে কড়কড়া ৫০০/ টাকা গুনে দিতে হলো শীমম কে। আমি ধন্যবাদ জানালাম আর তৃপ্তির ঢেকুর তুলে নিজকে বড় ভাগ্যবান মনে করে মাগরিবের সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে প্রবেশ করলাম।
...
মন্তব্যঃ ট্রেনের টিকেট কালোবাজারের স্বর্গভূমি
জামালপুর টাউন স্টেশন
দেখার আছে কেউ?
নূরুল হুদা আল মামুন’র স্ট্যাটাস থেকে