শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

তারেক যোগ্য বলেই নেতা বানিয়েছি: ফখরুল

তারেক যোগ্য বলেই নেতা বানিয়েছি: ফখরুল

ঢাকা, ০২ মে, এবিনিউজ: প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যোগ্যতার ভিত্তিতেই বিএনপির তারেক রহমান দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, তার দলের নেতাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে পদাধিকার বলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারেক রহমান। প্রায় এক দশক ধরে লন্ডন প্রবাসী তারেকও মায়ের সঙ্গে ওই মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন। এছাড়া মুদ্রাপাচারের আরেক মামলায় সাজা রয়েছে তার।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে দেয়ার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। বুধবার এক আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাৎক্ষণিক এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের যিনি নেতা হয়েছেন আমাদের পার্টির কাউন্সিলে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়ে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে।

আমাদের পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পার্টির চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের। আমাদের নেতা আমরা নির্বাচিত করেছি। যোগ্য নেতা বলেই আমরা তাকে নির্বাচিত করেছি। এটাতে আপনাদের বলার কিছু নেই, এটা গ্রহণযোগ্য নয়। প্রসঙ্গত, গতকাল গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি তারেক রহমানকে নেতা নির্বাচনের সমালোচনা করেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে সাবেক এমপি মরহুম নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়।

সংগঠনের সভাপতি সাইদ হাসান মিন্টুর সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নির্বাহী কমিটির সদস্য মরহুম নাসিরউদ্দিন পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আখতার কল্পনাসহ মহানগর দক্ষিণের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

তারেক রহমানের মামলা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিনি সাজাপ্রাপ্ত কোন মামলায়? যে মামলায় তিনি খালাস পেয়েছিলেন। তাকে খালাস দেবার অপরাধে ওই বিচারককে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে তার জীবন বাঁচাতে। আপনারা সব সাজাপ্রাপ্তদের নিয়ে মন্ত্রীত্বে বসিয়ে রেখেছেন। আপনাদের মামলাগুলো একটাও রাখেননি সব নিজেরা তুলে নিয়েছেন।

সকলের গুলো সমান হবে, আপনাদের মামলাও থাকুক, অন্যান্যদেরটাও থাকুক। দেখা যাক কি হয়? আর আদালত নিরপেক্ষ হোক।

তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে বন্দুকের নল দেখিয়ে বের করা হয়েছে। এই সরকার বিচার বিভাগকে শেষ করে দিয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কোথায়? আপনারা নিম্ন আদালতের সব ক্ষমতা নিয়ে নিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি ব্রিটিশ সরকারের সাথে আলাপ করছেন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনবেন। এই ভয় আমাদের দেখাচ্ছেন কেনো? তিনি দেশে ফিরে আসতে হলে আসবেন। যেদিন তিনি মনে করবেন দেশের জন্মগত নাগরিক হিসেবে তার দেশে ফিরে আসবেন এবং সেদিন আপনারা দেখবেন তার জনপ্রিয়তা কত এবং মানুষ তাকে কত ভালোবাসে। সেইদিন দেখবেন কোটি কোটি মানুষ তাকে বরণ করবার জন্য সেই এয়ারপোর্টে গিয়ে হাজির হয়েছে।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোর কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিতে দিতে এখানে তারা এসেছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো করেছে একটিরও ভিত্তি নাই। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ১১ বার আইও (তদন্তকারী কর্মকর্তা) পরিবর্তন করেছে। সর্বশেষ যাকে আইও করেছে তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগের নমিনেশন প্রার্থী ছিলো। যাকে দিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি করেছে, তাকে তো ফাঁসি দিয়ে দিয়েছে যাতে সে কোনো কথা বলতে না পারে।

রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান মেরুদন্ডহীন সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সরকার একটা চুক্তি করলেন। এই চুক্তিতে এখন পর্যন্ত ৬ মাস হয়ে গেলো একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠাতে পারেনি এবং পারবেন না। এখন যে অবস্থা আছে তাতে ফেরত পাঠানো যাবে না। এই মেরুদন্ডবিহীন এই সরকার এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সরকারকে নিন্দা জানিয়ে একটাও রেজুলেশন নেয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে উনি বিশ্বমতের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আপনাদের মনে আছে প্রথম কয়েকদিন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দিলেন না এবং কি গুলিও করা হয়েছে তাদের ওপর। আমাদের দেশনেত্রী লন্ডন থেকে একটি বিবৃতি দিলেন এবং তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে কয়েকজন মন্ত্রী আসার পরে তখন তিনি তাদের ঢুকতে দিয়েছেন। দেশের মানুষ আমরা সবাই রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করেছে।

আমরা কেউ চাই না তারা এদেশে থাকুক। তারা আমাদের দেশের নাগরিক নয়, তারা মিয়ানমারের নাগরিক। মিয়ানমারে ফিরে যাবার জন্য তো এই সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। উনারা এর আগে কয়েক হাজার টন চাল আমদানি করেছে। যারা রোহিঙ্গাদের মারলো, গুলি করে হত্যা করলো, নারীদের ধর্ষণ করলো তাদের কাছে থেকে কেস টাকা দিয়ে চাল নিয়ে আসলেন ব্যবসায়ে সাহায্য করার জন্য।

আগামী নির্বাচনের আগে আবারো খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজ অশুভ পদধ্বনি শুনছি। আজকে গায়ের জোরে শুধু শক্তির জোরে এই সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে। আমি বলতে চাই, আপনারা রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি করেছেন ভয়াবহভাবে। এদেশের মানুষ আপনাদের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। আমরা একা নয়, সকল রাজনৈতিক দল বলছে নির্বাচনকালীন একটি নিরপক্ষে সরকার দরকার।

সবার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্বাচনের সময়ে সেনা বাহিনী নিয়োগ করতে হবে।

এবিএন/মমিন/জসিম

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত