শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের আন্দোলনের ডাক

বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের আন্দোলনের ডাক

ঢাকা, ০৪ মে, এবিনিউজ : গণতন্ত্র, সুশাসন এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির বিএনপিপন্থী আইনীজীবরা। আর এই আন্দোলনে প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনকে সামনে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের শামসুল হক চৌধুরী (১নং) হলে “আইনের শাসন ও গণতন্ত্র শীর্ষক” মতবিনিময় সভায় বক্তারা এই আহ্বান জানান। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. কামাল হোসেন।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির আয়োজনে সভায় সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি এডভোকেট জয়নুল আবেদীন। সভা উপস্থাপনা করেন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবু উদ্দীন খোকন।

বক্তারা বলেন, দেশে আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সুশাসন নেই। সরকার স্বৈরাচারি রূপ ধারণ করেছে। সকল পথ স্তব্ধ করে দিয়ে জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। মানুষ বাকস্বাধীনতা হারিয়েছে। সবকিছুতে ভীতি সৃষ্টি করে সরকার নাগরিক জীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে। এই অবস্থায় একটি জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে গণআন্দোলনে নামতে হবে। আর সেই আন্দোলনে সামনে থাকুক ড. কামাল হোসেন এবং বি. চৌধুরীদের মতো প্রবীণ রাজনীতিকরা।

সভায় ব্যারিস্টার শাহদীন মালিক বলেন, দেশ আজ বিভাজিত। এতো বিভাজিত দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ পথে যাবে। এই অবস্থায় কিছু কিছু জায়গায় আমাদের দলীয় লেজুড়বৃত্তি ছাড়া দরকার। এটা যদি না হয় আমাদের আইনের শাসন তলানিতে চলে যাবে।

গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভারত বর্তমান সরকারের মুরব্বি। যখন মুরব্বি গুন্ডা হয়, তখন দেশের কী অবস্থা হয়, তা বলা কি প্রয়োজন! বর্তমানে যে ভেজাল গণতন্ত্র তার জন্ম বিচারকদের হাতে। খায়রুল হক এর জন্য দায়ী। তার কি বিচার হবে না? দেশে আজ কঠিন পরিস্থিতি। এই কঠিন পরিস্থিতিতে ড. কামাল হোসেনদের সামনে আসতে হবে। চুপচাপ বসে না থেকে জীবনের শেষ বেলায় এসে নিজেদের দায়িত্ব পালন করার অনুরোধ করছি। ভেজাল গণতন্ত্রমুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠায় কামাল হোসেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরীদের দায়িত্ব আছে। ভবিষ্যত উন্নত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কামাল হোসেনরা সামনে থাকুন, সে আশা করি।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আজকের মূল দাবি হলো একটি গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি কাউকে জোর করে নির্বাচনে আনতে চান না। আপনাকে জোর করতে বলেছে কে? আপনি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে চান, অথচ সে নির্বাচনের যিনি প্রধান বিরোধী পক্ষ তাকে বন্দি রাখলেন। সে নির্বাচন কি কখনো গ্রহণযোগ্য হবে? সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এই অবস্থায় রাজপথ ছাড়া উপায় নেই। কোটা আন্দোলনের মতো আন্দোলন শুরু করতে হবে। ড. কামাল হোসেন এবং বি চৌধুরী মিছিল শুরু করুক। সে মিছিলে আমরা সাথে আছি। রাজপথ ছাড়া কোনো উপায় নেই। যদি প্রকৃত গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন হয় আমি সাথে আছি। লড়াই করেই জিততে হবে।

এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন সকল কিছু ভুলে আসুন একটি যুক্তফ্রন্ট গঠন করুন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। ড. কামাল হোসেন, বি. চৌধুরী আন্দোলনে নামার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য দরকার। গণতন্ত্র, আইনের শাসনের জন্য আসুন ঐক্যবদ্ধ হই। সেই আন্দোলনে যদি আপনারা মনে করেন বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্বে থাকবেন।

সাংবাদিক ও কলামিস্ট মাহফুজ উল্লাহ বলেন, পুরো সমাজকে যখন ভীতি গ্রাস করে তখন গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সুশাসন থাকে না। এ সরকারের কাছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র আশা করা ভুল। জাতিকে বিভাজনের চেতনা শুরু করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ও এই বিভাবজনের রাজনীতি শুরু হয়নি। ১৯৮৭ সালে বিভাবজনের বিষয়টি প্রথম নিয়ে আসেন শেখ হাসিনা। এর আগে তা ছিলো না। এই অবস্থায় আপনারা যতই খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন করেন না কেন তাতে কোনো কাজ হবে না। বর্তমান সরকার তার ক্ষমতা যতক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারছে না ততক্ষণ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের জন্য হুমকি স্বরূপ। তাই তাকে বন্দি রাখছে। এই অবস্থায় সকল মতভেদ ভুলে গিয়ে আমাদেরকে রাজপথে নামতে হবে।

উপস্থিত বক্তাদের আহ্বানে সায় দিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ঐক্যেল ডাক আমরা ইতোমধ্যে দিয়েই রেখেছি। আপনারা আসুন সবাই। গণতন্ত্র, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন ও সুশাসনের জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ হলে যে শক্তি আসে তা সবাই জানে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

ড. কামাল বলেন, আশির দশকে আমরা স্বৈরাচারি এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। অর্থ ছিলো, অস্ত্র ছিলো সরকারের। আর জনগণের ছিলো ঐক্য। শক্তিশালী স্বৈরাচারি এরশাদের পতন হয়েছে। স্বৈরাচারি সরকার এদেশে টিকে থাকতে পারে না। জনগণ তা মানে না। আমরা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম ষাটের দশকে। তারা অন্যায় করেছিলো। এরপর আরো বহু আন্দোলন করেছি। বর্তমান সরকার অন্যায় করছে। ২০১৪ সালের একটি ভ্রান্ত নির্বাচন করে এখনো ক্ষমতা ধরে আছে। অথচ তখনই নির্বাচন দেয়ার কথা ছিলো। ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ চলে গেলো। এখনো নির্লজ্জভাবে ক্ষমতায় রয়ে গেছে। কতো লজ্জাহীন, নীতিহীন স্বৈরশাসক। এভাবে চলতে পারে না।

কামাল হোসেন বলেন, দেশের প্রধান বিচারপতিকে যারা এভাবে অপমান করেছে, তারা অন্যায় করেছে। তাদের বিচার হতেই হবে। দু:খ লাগে যে, এতো বছর পর এসে আবারও আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পথ বেছে নিতে হচ্ছে! সরকার গুলি করলে করবে। আন্দোলন হতে হবে। নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে।

এবিএন/মমিন/জসিম

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত