![মাদারীপুরে তরুণী ধর্ষণ ঘটনায় থানায় মামলা](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/05/04/magaripur-mamla_138004.jpg)
মাদারীপুর, ০৪ মে, এবিনিউজ: মাদারীপুর সদর উপজেলার উত্তর দুধখালী গ্রামের এক তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আর জোরপূর্বক সালিশ বৈঠক করে গ্রামের প্রভাবশালীরা নির্দ্ধারন করে ওই তরুণীর পরিবারকে ইজ্জতের বিনিময় ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে ধর্ষণের ওই ঘটনাকে রফাদফা করে দেয়। সংবাদকর্মিদের সহযোগিতায় তিনদিন পরে থানায় মামলা করতে আসে, ভয়ে পালিয়ে থাকা ধর্ষনের পরিবার।
স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, সোমবার রাতে উত্তর দুধখালী গ্রামের হাজাম পরিবারের এক পান দোকানির মেয়েকে (২২) বাড়িতে ফাকা পেয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে একই গ্রামের জৈনদ্দিন খলিফার ছেলে রাসেল খলিফা (২৮)। তরুণীর গালে ও মুখমন্ডল কামড়ে ক্ষত-বিক্ষতও করে ধর্ষণকারী। ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার সকালে ওই নির্যাতিতা তরুণী তার মায়ের সাথে থানায় মামলা দায়েরের জন্য আসে। কিন্তু এলাকার প্রভাবশালী একটি মহল থানায় এসে ওই তরুণী ও তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক এলাকায় নিয়ে যায়।
পরে দুপুরে তড়িঘড়ি করে ইউনিয়ন পরিষদের এক প্রভাবশালী সদস্যে শরাবউদ্দিন চৌকিদারের নেতৃত্বে একটি বাড়িতে সালিশ বৈঠক বসে। সেখানে ধর্ষণকারী রাসেল খলিফাকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর ২০ হাজার টাকা দেয়া শেষে প্রভাবশালীরা ভয়দেখিয়ে ধর্ষনের স্বীকার ওই তরুণীকে তার পরিবারসহ কিছুদিন এলাকা ছেড়ে অন্যত্র থাকার হুমকি স্বরুপ নির্দেশ দেয়। এই ঘটনার পর থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ওই নির্যাতিতা তরুণী ও তার পরিবারের লোকজনের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
এই ধরনের একটি ঘটনা সালিশে মীমাংসা করায় এলাকার মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এমন সংবাদ পেয়ে জেলার কর্মরত কিছু সংবাদকর্মি ঘটনা স্থলে ছুটে গেলে ধর্ষনের ধামাচাপার ঘটনাটি স্থানীয়দের থেকে বেরিয়ে আসে। সংবাদকর্মিদের সহযোগিতার আর্শাস পেয়ে নির্যাতিতা পরিবার পুলিশের সহযোগিতায় মাদারীপুর সদর মডেল থানায় অভিযোগ দিতে আসে।
জেলাপরিষদের সদস্য ফারুক খান জানান, আমি এর আগেও শুনেছি রাসেল নামের ঐ ছেলেটা এরকম মেয়ে কেলেংকারী কাজ আরও করেছে ও মাদকসেবন করে বলে আমি অভিযোগ পেয়েছি। আমি এই ঘটনায় দোষিদের বিচার দাবি করছি।
প্রভাবশালী শালিশ দয়ের একজন শরাবউদ্দিনের কাছে বাড়ীতে না পেয়ে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি তালবাহানা করে কথা ঘুরাতে থাকে, প্রথমে টাকা দিয়ে মিটমাটের কথা স্বীকার করলেও পরে অস্বীকার করে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদারীপুর সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মোহাম্মদ আবু নাইম জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই এলাকায় গিয়ে ওই তরুণী ও তার পরিবারের সাথে কথা বলে। ওই তরুণীর পরিবার তখন ধর্ষনের কথা আমাদের কাছে স্বীকার করেনি, এখন বলছে ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোন আইনগত ব্যবস্থার দাবি না থাকায় পুলিশ কোন ভূমিকা পালন করতে পারেনি। এখন মামলা রুজু করা হয়েছে। ভিকটিমকে মেডিকেলের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, কোন তরুণী নির্যাতনের ঘটনা সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করা সম্ভব নয়, যদি কেউ এরকম করে থাকে ভুল করেছে। প্রমানিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্যাতনের ব্যাপারে সদর থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। আসামী ধরার আভযান চলছে। অল্পসময়ের মধ্যে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এবিএন/ সাব্বির হোসাইন আজিজ /জসিম/নির্ঝর