আগৈলঝাড়া (বরিশাল) , ২৯ সেপ্টেম্বর, এবিনিউজ : আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের চেঙ্গুটিয়া কান্দিরপাড় গ্রামের প্রতিবেশী তিন ভাইয়ের সাথে নৌকায় বিলে ঘুরতে গিয়েছিলো পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া এক স্কুল ছাত্রী (১৪)। বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে স্থানীয় কতিপয় মাদকসেবীরা ওই চারজনকে বিলের মধ্যে একটি পরিত্যক্ত ভিটায় নিয়ে বেধরক মারধর শেষে উলঙ্গ করে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেছে। পরবর্তীতে প্রথম দফায় ওই তিন মাদকসেবী স্কুল ছাত্রীকে গণধর্ষণের পর ঘুরতে যাওয়া তিন বন্ধুর মধ্যে একজনকে দিয়ে জোরপূর্বক ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করিয়ে পূর্ণরায় তা ভিডিও ধারণ করেছে। ওই ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে মাদকসেবীরা স্কুল ছাত্র তিনবন্ধুর পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা আদায় করেছে। বিষয়টি ধামাচাঁপা দেয়ার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীরা আপ্রাণ চেষ্টা করেও থানা পুলিশের হাত থেকে শেষ রক্ষা পায়নি। ভিডিও চিত্রটি বিভিন্ন মোবাইলে ছড়িয়ে পরার পর খবর পেয়ে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশ বুধবার সকালে ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করেছে।
সূত্রমতে, ওই গ্রামের এক প্রবাসীর কন্যা ও কান্দিরপাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ুয়া ছাত্রী (১৪) তার প্রতিবেশী চাচাতো ভাই সম্পর্ক নবম শ্রেনীতে পড়ুয়া স্কুল ছাত্র লিমন সরদার, নয়ন ঘরামী ও ফেরদাউস মোল্লার সাথে গত ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে নৌকাযোগে রাজিহার চৌদ্দমেধা বিলে ঘুরতে যায়। বিষয়টি দেখে চেঙ্গুটিয়া গ্রামের মৃত মজিদ তালুকদারের পুত্র চিহ্নিত মাদকসেবী মুন্না তালুকদার, তার সহযোগী মাইনউদ্দিন সরদার, মিজানুর রহমান সরদার, আকবর আলী সরদার ও মিলন হাওলাদার অন্য একটি নৌকা নিয়ে বিলে গিয়ে স্কুল ছাত্রীসহ তার সাথে ঘুরতে যাওয়া তিনবন্ধুকে জোরপূর্বক বিলের মধ্যের নির্জন সেলিমের ভিটার নিয়ে যায়।
স্কুল ছাত্র লিমন সরদার জানায়, স্কুল ছাত্রীসহ তাদের চারজনকে সেলিমের ভিটায় নিয়ে মুন্না ও তার সহযোগীরা বেধম মারধর করে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে একজনের লজ্জাস্থান অন্যজনকে দিয়ে ধরিয়ে মিলনের মোবাইল ফোনে তা ভিডিও ধারণ করে।
ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রী জানায়, আমাদের উলঙ্গ করে ভিডিও করার পরে মুন্না ও তার তিনসহযোগী জোরপূর্বক আমাকে ধর্ষণ করে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ঘুরতে যাওয়া তিন বন্ধুর মধ্যে একজনকে দিয়ে আমাকে ধর্ষণ করিয়ে পুনরায় তা ভিডিও ধারণ করে। ওই স্কুল ছাত্রী আরও জানায়, তার সাথে ঘুরতে যাওয়া ওই চাচাতো ভাই ধর্ষণ করতে অস্বীকার করায় মুন্না ও তার সহযোগীরা ফের তাদের মারধর করে। স্কুল ছাত্রীর সাথে ঘুরতে যাওয়া নয়ন ঘরামী জানান, মুন্না ও তার সহযোগীরা ওই ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
সরেজমিনে স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদকসেবীদের পক্ষালম্বন করে বিষয়টি ধামাচাঁপা দেয়ার জন্য স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধিসহ জনৈক নুর মোহাম্মদ তালুকদার ওই স্কুল ছাত্রী ও তার সাথে ঘুরতে যাওয়া তিনবন্ধুর পরিবারকে বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতিসহ হুমকি দিয়ে আসছে। এরই মধ্যে তিনপর্বের ওই আপত্তিকর ভিডিও চিত্র মোবাইল ফোনে ভাইরাল হওয়ায় পুরো উপজেলা জুড়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হলে লোকলজ্জায় স্কুল ছাত্রীসহ ওই তিন বন্ধু আত্মগোপন করে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ বুধবার সকালে স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করার পর অভিযুক্ত মুন্না তালুকদারসহ তার সহযোগীরা নিজ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়েছে।
হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আগৈলঝাড়া থানার ওসি আ. রাজ্জাক মোল্লা জানান, এ ঘটনায় ওই স্কুল ছাত্রী বাদী হয়ে বুধবার দুপুরে থানায় মামলা দায়ের করেছে। অভিযুক্ত মুন্না তালুকদারসহ অন্যান্যদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এবিএন/অপূর্ব লাল সরকার/জসিম/নির্ঝর
© আবহমান বাংলা মিডিয়া লিমিটেড কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
