![জুবায়ের-নার্গিস-নিয়ামত: ভেজা চোখের অনিশ্চিত রোহিঙ্গা জীবন](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/23/rohynga-children_127271.jpg)
ঢাকা, ২৩ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : টিন শেডের একটি ঘরে বিষণ্ণ মনে বসে আছে জুবায়ের - বয়স ১১/১২ বছরের মতো হবে।
কেমন আছো? জানতে চাইতেই চোখ ভিজে উঠলো। ছোট এই শিশু তার ভাষায় জানালো বাবা-মার জন্য পেট পোড়ে - অর্থাৎ কষ্ট হয়।
জুবায়ের মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসেছে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে। তার বাবা-মাকে হত্যা করা হয়েছে।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে পালিয়ে এসে এখন সে রয়েছে উখিয়ার বালুখালি ক্যাম্পে।
প্রশ্ন ছিল কীভাবে সময় কাটে তার?
জুবায়ের জানালো ক্যাম্পের একটা মক্তবে পড়াশোনা করে সে, আর থাকে একটা পরিবারের সাথে, সেখানে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা আছে।
এটুকু বলতে গিয়েই কান্নায় গলা বুজে আসে তার, চোখে টলমল করে পানি।
জুবায়েরের মত অসংখ্য শিশু কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফে রয়েছে, সরকারি হিসেব বলছে এদের সংখ্যা ৪০ হাজারের মত।
তবে এসব শিশু অন্য শিশুদের তুলনায় একেবারে ভিন্ন, কারণ এরা বাবা-মা এবং পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছে।
টিউবওয়েলে পানি তুলছিল নার্গিস। দুপুর বেলা - তাই আরও চার-পাঁচটি শিশুর সঙ্গে গোসলের জন্য পানির ব্যবস্থা করছে ১৩ বছরের নার্গিস । এরই এক ফাঁকে কথা বলছিলাম তার সঙ্গে।
নার্গিস কথায় এখানে "একেবারেই আমার মন বসে না। আমি মিয়ানমারে ফেরত যেতে চাই। কারণ সেখানে আমার বাবা-মার কবর আছে"।
উখিয়ার ক্যাম্পগুলো ঘুরে আমি এমন অনেক শিশুর দেখা পেয়েছি, যারা তাদের বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলেছে। তারা এখানে বিভিন্ন রোহিঙ্গা পরিবারের সাথে থাকছে।
তাদের জন্য সরকারি এবং বেসরকারি বেশ কিছু উদ্যোগও চোখে পড়লো।
উখিয়া উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসান বলছিলেন যে এতিম শিশুদের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার, তবে সেটা অল্প সময়ের।
"বেসরকারি সংস্থার ফান্ডে সরকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু সেটা ছয় মাসের জন্য। দীর্ঘমেয়াদে কোন কিছু নেই আপাতত, কারণ এসব কিছু নির্ভর করে ফান্ডের উপর," বলছিলেন মি. হাসান।
তিনি আরো বলেন, "বর্তমানে ৪০ হাজার শিশুর যে পরিমাণ পুষ্টিকর খাদ্য, চিকিৎসা এবং ভালো থাকার স্থান দরকার সেটা নেই। সবচেয়ে জরুরি যেটা দরকার সেটা হল এতিম এইসব শিশুর মানসিক সহায়তা দেয়া - যেটা একেবারেই নেই। কারণ তারা বাবা-মা হারিয়েছে তাদের সবচেয়ে বেশি মানসিক সার্পোট দরকার"।
নিয়ামত উল্লার বয়স ১২। থাকার জন্য সেই অর্থে তার কোন পরিবার মেলেনি।
কুতুপালং ক্যাম্পে রাতটা কোন রকম পার করে। সারাদিন রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় অথবা মক্তবে এসে পড়াশোনা করে।
"আমাদের বাড়িতে বোমা মারা হয়," বলছিল নিয়ামত। "ওই সময় বাড়ির বাইরে থাকায় আমি বেঁচে যাই। আমার পরিবারের সবাই মারা গেছে"।
নিয়ামত উল্লার সঙ্গে যখন আমি কথা বলি, তখন তার চোখেমুখে ভাবলেশহীন একটা দৃষ্টি আমি দেখেছি।
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা হাজার হাজার এতিম শিশুর পড়াশোনা বলতে মক্তবে সময় কাটানো, আর মাথাগোঁজার জন্য কোন রোহিঙ্গা পরিবারে ঠাঁই বা দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয়।
কিন্তু এতো অল্প বয়সে বাবা-মাকে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে দেখা এসব শিশুর মনের কষ্ট যে কোন কিছুতেই মেটে না, সেটা তাদের বারবার ভিজে ওঠা চোখ দেখলেই বোঝা যায়। সূত্র: বিবিসি বাংলা
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি