
বাউফল(পটুয়াখালী) , ২৫ এপ্রিল, এবিনিউজ : ‘সবাই স্কুলে যায়। আমারও খুবই স্কুলে যাইতে মোনে কয়। কত দিন হয় স্কুলে যাই না। ল্যাহাপড়া করতে না পারলে আমি যে পরীক্ষায় পাশ করতে পারমু না। আমি সুস্থ্য অইয়্যা আবার স্কুলে যাইতে চাই, ল্যাহাপড়া করতে চাই।’
আজ বুধবার সকালে এভাবে আকুতি-মিনতি করে কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বাম পা হারানো পটুয়াখালীর বাউফল আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনির ছাত্রী সাবেকুন নাহার দুলিয়া (১৫)। তার বাবার নাম মোঃ দুলাল হাওলাদার। পেশায় একজন দিনমজুর। বাউফল পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। অভাব অনাটনের সংসার হলেও একটি দোচালা টিনের ঘরে মা-বাবা ও দুই ভাইয়ের আদর স্নেহ এবং ভালোবাসায় পরিপূর্ন ছিল দুলিয়ার শিশু জীবন। একদিন বাড়ীর আঙ্গিনায়, রাস্তাঘাটে, মাঠে ময়দানে ছুটাছুটি করে বেড়াতো দুলিয়া। কত স্বপ্ন ছিলো তার মনে। লেখাপড়া শিখে একদিন মানুষের মত মানুষ হবে। চাকরি করে অসহায় বাবা মায়ের মুখে হাসি ফুটাবে। পরিবারের পাশাপাশি দেশ ও মানুষের সেবা করবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন কেড়ে নিলো ক্যান্সার নামক ঘাতক রোগে ।
দুলিয়ার মা রাহিমা বেগম জানান, গত বছরের অক্টোবর মাসে প্রতিদিনের মত ক্লাসে যায় দুলিয়া । সহপাঠীদের সাথে দুষ্টামি করতে গিয়ে বেঞ্চের ওপর পড়ে বাম পায়ে হাটুর নীচে আঘাত পায় সে। অল্প আঘাত পেয়েছে ভেবে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। সামান্য বিষ-ব্যাথার ঔষধ খেয়েছে। তাতে একটু ভালো অনুভব করেছেও বটে। কিন্তু কিছুদিন পর আবার ব্যাথা অনুভব করলে নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলা সদর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে তার পায়ে প্লাষ্টার ব্যান্ডেজ করে দেয়া হয় এবং কিছুদিন বিশ্রামে থাকতে বলা হয়েছে। তাতেও ভালো অনুভব না করায় চিকিৎসকের পরামর্শে ওই ব্যান্ডেজ খুলে এক্সরে করা হয়। এক্সরে রিপোর্ট দেখে হাড্ডিতে ফাটল ধরেছে বলে জানান চিকিৎসক। পরে তাকে বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেও অবস্থার কোন উন্নতি না হলে এ বছরে জানুয়ারি মাসে জাতীয় ক্যান্সার গবেষনা ইনেস্টিটিউট ও হাসপাতাল মহাখালী, ঢাকায় নিয়ে ভর্তি করা হয় ।
ওই প্রতিষ্ঠানের সহোযোগী অধ্যাপক ডাঃ শাহ মোঃ রাশেদ জাহাঙ্গীরের তত্বাবধায়নে চিকিৎসা শুরু হয় দুলিয়ার । চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর বাম পায়ের ওই অংশে ক্যান্সারের জীবানু আছে বলে সনাক্ত করেন এবং ওই জীবানু যাতে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যেতে না পারে সেই জন্য বাম পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেন। এক পর্যায়ে অপারেশন করে বাম পা কেটে ফেলা হয়। দুলিয়ার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। থেমে যায় তার পথ চলা। এ অবস্থায় ধার-দেনা করে মেয়ের চিকিৎসা খরচ চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় দুলিয়ার বাবা দুলাল হাওলাদার। দুলিয়া সুস্থ্য হতে চিকিৎসার জন্য এখনও ৫ লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন। কে দেবে এত টাকা? কোথায় পাবে ? তা ভেবে ভেঙ্গে পড়েছেন অসহায় বাবা দুলাল হাওলাদার।
চিকিৎসকরা জানান, দুলিয়ার শরীরের অন্য কোন স্থানে ক্যান্সারের জীবানু যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য মোট ১৩ বার ক্যামোথেরাপি দিতে হবে। প্রতিবার থেরাপি দিতে ২৫ হাজার টাকা খরচ হবে। এত তার ৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার প্রয়োজন। এরপর রয়েছে রোডিও থেরাপি তাতে ও প্রয়োজন প্রায় লক্ষাধিক টাকা। পথ চলার জন্য দুলিয়া কৃত্রিম পা সংযোগ করতে খরচ হবে ১ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে ৫ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করতে পারলে দুলিয়া হয়ত পথ চলতে পারবে।
দুলিয়ার বাবা দুলাল হাওলাদার বলেন, আমি একজন দিন মজুর। অভাব অনাটনের সংসারে ধারদেনা করে এ যাবত মেয়ের চিকিৎসা খরচ চালিয়েছি। এখন আর পারছি না। চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য এখনও ৫ লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন। তাই আমার মেয়ের চিকিৎসার খরচ যাতে চালিয়ে যেতে পারি সে জন্য সমাজের বিত্তশীল ও দানশীল ব্যক্তিদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছি। গরীব অসহায় পা হারানো স্কুল ছাত্রী দুলিয়ার চিকিৎসার জন্য যারা আর্থিকভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চান তারা অনুগ্রহ করে (দুলিয়ার বাবার মোবাইল ০১৭২৮৬৩২১৮৮) এ নম্বরে যোগাযোগ করুন।
এবিএন/মোঃ দেলোয়ার হোসেন/জসিম/নির্ঝর